Rahul Majumder | | Editor: শ্যামশ্রী সাহা ২৯ আগস্ট ২০২৪ ২০ : ২৬Rahul Majumder

নিজস্ব সংবাদদাতা : মঞ্চাভিনেতা কোরক সামন্ত সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ‘পদাতিক’ ছবিতে ‘তরুণ’ মৃণাল সেন। বাস্তবে মৃণাল সেনের কৈশোর থেকে যৌবনে উত্তীর্ণ হওয়া বয়সের মাত্র একটি ছবি পাওয়া গিয়েছে। সেখানে তাঁর জন্য ঠিক কতটা কঠিন ছিল অদেখা মৃণাল সেনকে ফুটিয়ে তোলা? ছোট থেকে ‘মৃণাল সেন’ শুনে আসা কোরকের পর্দায় আক্ষরিক অর্থেই ‘আকালের সন্ধানে’ পরিচালক হয়ে ওঠাই বা উঠল কী ভাবে? পদাতিক-এ বিতর্কিত নগ্ন দৃশ্য শুটিংয়ের আগে ঠিক কী করেছিলেন তিনি? উঠে এল নানা জানা-অজানা কথা। সবকিছু নিয়ে আজকাল ডট ইন-এর সঙ্গে আড্ডায় কোরক সামন্ত। শুনল রাহুল মজুমদার। 

 

প্রশ্ন: ‘পদাতিক’-এর পর কতটা জীবন পাল্টাল?

কোরক: (হাসি) না, তেমন করে কিছু বদলায়নি। তবে রাস্তার পাশে ছবির বড় বড় ব্যানারে নিজের মুখ দেখতে পাচ্ছি...এইটা একটু অন্যরকম ব্যাপার সেটা ঠিক। 

 

প্রশ্ন: বন্ধুদের তরফে ভালবাসা বাড়ল না কি ঈর্ষা?

কোরক: (একমুহূর্ত না ভেবে) ভালবাসা! অফ কোর্স ভালবাসা! ঈর্ষার কোনও প্রশ্নই নেই। 

 

প্রশ্ন: ‘পদাতিক’ নিয়ে সমালোচকেরা দারুণ উৎসাহিত কিন্তু বক্স অফিসের হিসাব তার বিপরীতে। কী বলবেন?

কোরক: দেখুন, শহরের এই উত্তাল সময়ে মানুষ প্রেক্ষাগৃহে ভিড় করে আসবে না এটাই স্বাভাবিক। খানিক দুঃখ তো রয়েছে তবে এই ছবি দেখে অপর্ণা সেনের মতো শিল্পীরা প্রশংসা করেছেন এটা বিরাট পাওয়া। বিভিন্ন ফেস্টিভ্যালে সম্মানিত হয়েছে 'পদাতিক' সেই প্রাপ্তির আনন্দটুকু তো মিথ্যে নয়। বরং সাহস জোগায়।  

 

প্রশ্ন: কীভাবে সুযোগ পেলেন ‘পদাতিক’-এ?

কোরক: আমার কথা সৃজিতদাকে অনির্বাণদা বলেছিলেন। অনির্বাণ ভট্টাচার্য। তারপর সৃজিতদা আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তবে এর মধ্যে আরও একটি ব্যাপার লুকিয়ে রয়েছে। সেটা একটু অদ্ভুত। বলব?

 

প্রশ্ন: নিশ্চয়ই! বলুন না 

কোরক: স্কুল-কলেজ থেকেই আমাকে আমার বন্ধুরা বলাবলি করত আমার চেহারার মধ্যে নাকি পাঁচ-ছয়ের দশকের বাঙালিদের চেহারার একটা সাদৃশ্য রয়েছে। আমার শুনে বেশ মজাই লাগত। পরে যখন জানতে পারলাম যে সৃজিত মুখোপাধ্যায় ওই সময়ের প্রেক্ষাপটে মৃণাল সেনকে নিয়ে একটি ওয়েব সিরিজ তৈরি করবেন, ওঁর নম্বর জোগাড় করে একটা মেসেজ করেছিলাম–‘আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করতে চাই মৃণাল সেনের কাজটির বিষয়ে'। উনি এত ব্যস্ত, স্বাভাবিকভাবেই তা দেখে উঠতে পারেননি উনি। তাই আমিও পাল্টা জবাব পাইনি তখন। পরে তো আর বিভিন্ন কারণে ওয়েব সিরিজটি আর হল না। ছবিই হল। এরপর অনির্বাণদার কাছে আমার কথা শুনে, ছবি দেখে প্রায় মাস পাঁচেক পর সেই ম্যাসেজের পাল্টা জবা দিয়ে সৃজিতদা লিখলেন ‘হ্যাঁ, আমিও না তোমার সঙ্গে দেখা করতে চাই..’ (হাসি)। তারপর তো দেখা, কথা হল। এইভাবেই আর কী। 

 

প্রশ্ন: তবু এটা নিশ্চয়ই শুটিংয়ে সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের বকা খাওয়া থেকে বাঁচাতে পারেনি আপনাকে?

কোরক: (জোর হাসি) আরে না, না! এরকম কিন্তু নয় বিষয়টা। তবে বকা খাইনি বলে মিথ্যে বলা হবে। হ্যাঁ খেয়েছি, তবে খুব সামান্য তাও আমারই দোষে। কাজ করতে গেলে তো ওটুকু হয়ই। 

 

প্রশ্ন: চঞ্চল চৌধুরীও খেতেন বকা?

কোরক: (আরও জোরে হাসি) না, না! একদম না! চঞ্চলদা যেভাবে প্রস্তুতি নিয়ে সেটে আসতেন, ওঁকে কিছু বলারই জায়গা দিতেন না। 

 

 

প্রশ্ন: চঞ্চল চৌধুরীর সঙ্গে আপনার প্রথম কাজ। কিছু নির্দেশ এসেছিল ওঁর তরফে?

কোরক: না। উনি অন্য ধরনের মানুষ। ছবিতে একবারই মাত্র আমাদের একসঙ্গে দেখা গিয়েছে। তাও আবার খুব সেনসিটিভ দৃশ্যে। শুট শেষে আমি তখন অর্ধনগ্ন অবস্থায়। আমার পিঠ চাপড়িয়ে, জড়িয়ে ধরেছিলেন তিনি। বুঝতে পেরেছিলাম, আমার কাজ ওঁর বেশ ভাল লেগেছে। এটাই। 

 

প্রশ্ন: ছবিতে নগ্ন দৃশ্যে অভিনয় করেছেন। কীভাবে প্রস্তুতি নিয়েছিলেন? 

কোরক: একটা মানসিক প্রস্তুতি তো ছিলই। যেদিন ওই দৃশ্যের শুট হয় সেদিন আমার আর কোনও দৃশ্যের শুটিং রাখেননি সৃজিতদা। ফলে খানিকটা চাপমুক্ত ছিলাম। আর সৃজিৎদাকে বলেছিলাম, যে ঘরের সেটটা তৈরি হচ্ছে আমি সকাল থেকে ওখানে থাকতে চাই। একাগ্রতা বাড়াতে সাহায্য করবে বিষয়টি আর এই যে দেখছি ঘরটা আমার চোখের সামনে অল্প অল্প করে তৈরি হচ্ছে, যেখানে আমি বিশ্ব, হেঁটেচলে বেড়াব, নিজের ঘর বলে মনে করব...এইটা মনে করা খুব জরুরি ছিল। ওটা এইভাবেই আত্মস্থ করতে পেরেছিলাম। আর সেটটা ছোট থাকাতে হাতেগোনা মাত্র কয়েকজন কলাকুশলী ছিলেন ওই দৃশ্যের শুটিংয়ের সময়।বাকিরা সবাই পাশের ঘরে মনিটরে নজর রাখছিলেন। 

 

প্রশ্ন: ‘পদাতিক’ করতে গিয়ে মৃণাল সেনকে যতটুকু চিনলেন সেই নিরিখে যদি জিজ্ঞেস করা হয়, ওঁর ব্যক্তিত্বের কোন গুণটি আপনার সবথেকে ভাল লেগেছে?  

কোরক: (একটু ভেবে) নস্ট্যালজিয়ায় না ভোগা। উনি ফেলে আসা সময়ে বাঁচতে চাইতেন না। যা ছিল, তা ছিল। যা করেছেন, তা করেছেন। নতুন লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যেতেন প্রতিবার। ওঁর আরও একটা ব্যাপার আমার কাছে খুব ইন্টারেস্টিং লাগে। তা হল স্ববিরোধিতা। নিজেও সেকথা বহুবার বলেছেন। একবার তো এক সাক্ষাৎকারে প্রশ্নকর্তাকে বলেই দিয়েছিলেন যে ঝটপট এই প্রশ্নত্তোরপর্ব যেন শেষ করে ফেলা হয়। নইলে খানিকক্ষণ পর থেকে উনি নিজেই নিজের দেওয়া যুক্তি খণ্ডন করা শুরু করবেন। এইটা ভীষণ ইন্টারেস্টিং লেগেছে আমার কাছে। 

 

  

প্রশ্ন: মৃণাল সেন পরিচালিত প্রিয় ছবি কী? 

কোরক: দুটো বলছি। ‘আকালের সন্ধানে’ আর ‘ভুবন সোম’।  

 

প্রশ্ন: শেষ প্রশ্ন। আপনার কথা সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের কাছে বলেছিলেন অনির্বাণ ভট্টাচার্য, তিনি কী বললেন 'পদাতিক দেখে?

কোরক: অনির্বাণদার সঙ্গে কোনও কথা হয়নি এই বিষয়ে।